আজকে আমার পরিবারের সাথে ঘটে যাওয়া একটি ভয়ংকর ভৌতিক ঘটনা শেয়ার করবো। আমার নাম সালমা। আমার স্বামী একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন। আমাদের ৫ বছরের একটি ছেলে আছে। গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে কানাডার ভ্রমণ ভিসা নীতি সহজ করায় আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম কানাডা গিয়ে একবার ঘুরে আসবো। তাছাড়া আমার অনেক দিনের শখ দেশের বাইরে বেড়াতে যাওয়া।

Horror Story Bangla


আমাদের কানাডার ভিসা হয়ে যাওয়ার পর আমার স্বামী দুই মাসের ছুটি নিলেন এবং আমরা কানাডা যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলাম। কানাডায় থাকা আমাদের এক আত্মীয়ের মাধ্যমে আগে থেকেই সেখানে একটি বাড়ি ভাড়া করে রাখলাম। কারণ, দুই মাস তো কারও বাড়িতে থাকা যায় না।

আমরা কানাডার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম এবং কানাডা পৌঁছে প্রথম কয়েকদিন আত্মীয়ের বাসায় থাকলাম, তারপর আমাদের ভাড়া করা বাড়িতে গিয়ে উঠলাম। একটি ডুপ্লেক্স পুরনো বাড়ি। বাড়ির চারপাশে অনেক আগাছা জন্মেছে। বাড়ির সামনেই একটা বড় বটগাছ। মনে হচ্ছে অনেকদিন এই বাড়িতে কেউ থাকেনি। যেহেতু আমরা অল্প কিছুদিন থাকবো তাই জরুরি কিছু আসবাবপত্র কিনে নিলাম। তাছাড়া ঘরের ভিতর আগে থেকেই কিছু পুরনো আসবাবপত্র ছিল, হয়তো আগের ভাড়াটিয়া ফেলে গেছে।

ঘরের ভিতর অনেক ময়লা এবং ধুলাবালি ছিল, সেগুলো পরিষ্কার করে ঘর ঠিকঠাক করতে মোটামুটি দুই-তিন দিন লেগে গেল। প্রথম কয়েকদিন কোনো সমস্যা হয়নি। এরপর ঘটতে থাকলো একের পর এক ভয়ংকর ভৌতিক ঘটনা।

একদিন আমার স্বামী তৈরি হচ্ছিলেন বাইরে যাবার জন্য, খাওয়া-দাওয়ার জন্য কিছু বাজার সদাই করতে হবে। এদিকে আমার ছেলেও বায়না ধরেছে তার সাথে বাইরে যাবে। আমি আমার স্বামীকে বললাম, “ছেলেকে সাথে নিয়ে যাও, সে একটু বাইরে ঘুরে আসুক।” বাপ-বেটা বাইরে বের হয়ে গেল। আমি তাদের বিদায় করে দোতলায় গিয়ে গোসলটা সেরে নিলাম। তারপর ভাবলাম, আমার স্বামী মাছ-তরকারি নিয়ে আসতে আসতে আমি নিচে রান্নাঘরে গিয়ে ভাতটা রান্না করে ফেলি।

আমি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে রান্নাঘরে ঢোকার ঠিক আগ মুহূর্তে মনে হল একটা কালো অবয়ব আমার পেছন দিয়ে এক পাশ থেকে অন্য পাশে দৌড় দিল। আমি সঙ্গে সঙ্গে পিছন ফিরে তাকালাম কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না। বাড়িতে একা থাকায় খুব ভয় পেয়ে গেলাম। বুঝতে পারলাম না আমি সত্যি কিছু দেখেছি নাকি মনের ভুল। স্বামীকে ফোন করে তাড়াতাড়ি আসার জন্য বললাম।

স্বামী বাড়িতে ফিরলে বিষয়টা তাকে খুলে বললাম। তিনি হেসে উড়িয়ে দিলেন। বললেন, “বাড়িতে একা ছিলে তাই হয়তো একটু ভয় পেয়েছো, জিন ভূতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।” আমারও তাই মনে হলো, হয়তো একা থাকার কারণে দৃষ্টিভ্রম হয়েছে। কিন্তু মনের ভেতর থেকে ভয়টা কিছুতেই গেল না।

আরেকদিনের ঘটনা: আমি রান্নাঘরে রান্না করছিলাম, আর আমার ছেলে পাশের ঘরে খেলছিল। আমি রান্নাঘর থেকে শুনছিলাম আমার ছেলে একা একা কথা বলছে। ছোট বাচ্চারা খেলতে খেলতে একা একা কথা বলে — এটা স্বাভাবিক। কিন্তু আমার ছেলে এমনভাবে কথা বলছে যেন তার সামনে কেউ আছে।

আমি একটু সন্দেহ হওয়ায় রান্নাঘর থেকে উঁকি দিলাম, দেখলাম আমার ছেলে এমনভাবে কথা বলছে যেন তার সামনে কেউ বসে আছে। আমি ছেলেকে জিজ্ঞেস করলাম, "বাবা তুমি কার সাথে কথা বলছ?"
সে উত্তর দিল, "আমি স্টেলার সাথে কথা বলছি, মা।"
আমি জিজ্ঞেস করলাম, "কোথায় স্টেলা?"

আমার ছেলে রুমে থাকা একটি শেলফের কোণার দিকে হাত তুলে বলল, "ঐতো মা, শেলফের কোণায় দাঁড়িয়ে আছে।"
আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। রুমের ভিতর আমি আর আমার ছেলে ছাড়া আর কেউ নেই, অথচ ছেলেকে দেখে মনে হচ্ছিল সে কারো সাথে খেলছে।

সব ঘটনা স্বামীকে খুলে বললাম। আমি বললাম, “এই বাড়িতে খারাপ কিছু আছে।”

স্বামী হেসে উড়িয়ে দিলেন। বললেন, “এসব তোমার মনের ভুল। তুমি ভূতের সিনেমা বেশি দেখো, তাই সবসময় ভয় পাও।”

এটা ঠিক যে আমি ভূতের সিনেমা দেখতে খুব পছন্দ করি, কিন্তু তারপরও মনে হচ্ছিল বাড়িতে কোনো খারাপ কিছুর অস্তিত্ব আছে।

রাতে ঘুমানোর সময় ঘরের ভিতর বিভিন্ন রকম শব্দ শোনা যেত। যেমন — পায়ের শব্দ, চেয়ার টেবিল টানার শব্দ ইত্যাদি।

একদিন রাতে শুয়ে আছি, হঠাৎ পাশের রুম থেকে শব্দ এলো — পুরনো ইজি চেয়ারে কেউ দোল খেলে যেমন শব্দ হয়, তেমনি। মনে হলো ইজি চেয়ারে বসে কেউ দোলাচ্ছে।
স্বামীকে জাগিয়ে দিলাম। বললাম, "পাশের রুম থেকে শব্দ আসছে।"

স্বামীকে নিয়ে পাশের রুমের দরজা খুলতেই আমরা অবাক হয়ে গেলাম। দেখলাম ইজি চেয়ারটা আপনা-আপনি দুলছে। মনে হচ্ছিল এইমাত্র কেউ ইজি চেয়ার থেকে উঠে গেছে। রুমের দরজা জানালা সব বন্ধ ছিল। রুমের ভিতরে কোনো বাতাস নেই যে বাতাসে দোল খাবে।

আমরা বেশ চিন্তায় পড়ে গেলাম। বুঝতে পারলাম, বাড়িতে সত্যি কিছু একটা আছে।
কিন্তু অল্প কয়দিনের জন্য এসেছি, এর মধ্যে আবার বাড়ি পরিবর্তন করাও ঝামেলার ব্যাপার।

এরপর একদিন রাতে ঘুমের মধ্যে ভয়ংকর একটা স্বপ্ন দেখলাম।
আমি দেখলাম, খুব বিশ্রী চেহারার একটি অবয়ব আমাকে বলছে, "বটগাছের নিচে যা, বটগাছের নিচে সমাধান লুকিয়ে আছে।"

ভয়ে ঘুম ভেঙে গেল। বিছানা থেকে উঠে এক গ্লাস পানি খেলাম। আমার নড়াচড়া দেখে স্বামী জেগে গেলেন।
তিনি জিজ্ঞেস করলেন, "কি হয়েছে? তুমি হাঁপাচ্ছ কেন?"
আমি স্বামীকে সব খুলে বললাম।

তিনি বললেন, “কিছুদিন আগে এরকম একটা স্বপ্ন আমিও দেখেছিলাম, কিন্তু তুমি ভয় পাবে তাই তোমাকে বলিনি।”
আমি বললাম, "চলো আমরা এই বাড়ি ছেড়ে দেই।"
স্বামী বললেন, “আচ্ছা, দেখি কী করা যায়। এখন ঘুমাও।”

একদিন ঘর গুছাতে গিয়ে একটি পুরনো মার্কশিট পেলাম। ক্লাস থ্রিতে পড়া এক ছাত্রীর মার্কশিট।
ছাত্রীর নাম দেখে আঁতকে উঠলাম — নামের জায়গায় লেখা "স্টেলা"!
সেদিন আমার ছেলে এই নাম ধরে কাউকে ডাকছিল। গা শিউরে উঠলো।
আমি ঠিক করলাম, এই বাড়িতে আর থাকা যাবে না।

আমরা নতুন বাড়ি খোঁজা শুরু করে দিলাম। এর মধ্যে ঘটে গেল আরও ভয়ংকর এক ঘটনা।
একদিন রাতে খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি। হঠাৎ আমাদের বিছানাটা দুলতে শুরু করলো।
আমরা ঘুম থেকে উঠে দেখি, ঘরের চেয়ার টেবিলসহ সব আসবাবপত্র আপনা-আপনি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরে যাচ্ছে, ঘরের বাতিগুলো আপনা-আপনি জ্বলছে নিভছে। মনে হচ্ছিল ঘরের ভেতর ভূমিকম্প চলছে।
আমরা আর দেরি না করে দ্রুত বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম।

বাইরে এসে অবাক হয়ে দেখলাম — বাড়ির ভিতরে সব কিছু শান্ত, বাতিগুলো স্বাভাবিকভাবে জ্বলছে।
আমি স্বামীকে বললাম, "চলো এখুনি চলে যাই।"
স্বামী বললেন, "না, রহস্যটা আগে বুঝে নিই।"

তারপর তিনি বাড়ির সামনের বটগাছের দিকে তাকিয়ে বললেন, "এই বটগাছের আশপাশে কিছু পাওয়া যেতে পারে।"
একটি শাবল এনে তিনি বটগাছের চারপাশ খুঁড়তে লাগলেন।
খুঁড়তে খুঁড়তে বেরিয়ে এলো একটি ছোট চারকোনা কাঠের বাক্স।
বাক্স খুলে ভিতর থেকে পাওয়া গেল একটা পুরনো কাগজ — তাতে লেখা:
"এটা আমাদের আস্তানা, এখান থেকে চলে যাও।"

bangla bhooter golpo


আমরা বাড়িটা ছেড়ে দিলাম।
পরে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারলাম, এই বাড়িতে আগে একটি পরিবার বাস করত, যারা হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়ে যায়।
পুলিশেও রিপোর্ট হয়েছিল, কিন্তু তাদের আর খোঁজ পাওয়া যায়নি।
এরপর থেকে কেউই নাকি এই বাড়িতে বেশিদিন থাকতে পারেনি।
এখন আমরা বুঝতে পারছি — এই বাড়িটি সত্যিই ভূতের আস্তানা!

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন